বলদ
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:০১:৩৬ দুপুর
তখনো মোবাইলে মেমোরি কার্ডের প্রচলন শুরু হয়নি। মোবাইলের ইন্টারন্যাল মেমোরি দিয়েই সংরক্ষণের কাজ চলে আসছিল। সেই সময়ে একটি বাংলা অ্যানিমেশন কার্টুন দেখেছিলাম। সেখানে একজন বলদকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। আজ যতটুকু মনে পড়ছে, সেভাবেই তুলে দিলামঃ
দু’জনের ভিতর কথা হচ্ছে। একজনের মাথায় ডিমের ঝাঁকা। ঝাকাবিহীন জন জিজ্জেস করছে-
: কি রে, কই যাস?
ঝাঁকা মাথার জন বলছে-
: এই বাজারে যাই, মাথায় ডিম আছে, বিক্রী করুম।
: তুই নাকি বলদ? তো মাথায় ডিম নিয়া বাজারে যাবি ক্যামনে?
: সেটা তুই বুঝবি না। আচ্ছা ক’তো আমার মাথায় কি আছে? কইতে পারলে তোরে এইখান থেইক্যা দুইডা ডিম দিমু।
: তোর মাথায়... তোর মাথায়... আমার মাথা দেহি আবার চুলকায়। একটু সহজ কইরা দে।
: আচ্ছা শোন। আমার মাথায় যা আছে, তার গায়ের রঙ সাদা। ভাঙ্গলে কুসুম লালও হইতে পারে, আবার হলুদও হইতে পারে। আর কমুনা, কইলে বুইজ্জ্যা হালাবি।
: বুঝছি, তোর মাথায় লেম্বু।
: হাহ হা হা, হয় নাই। তুই আসলেই একটা বলদ। আমার মাথায় ডিম।
: ইস সি রে, আমি আগেই ধারনা করছিলাম।
এই যে কথোপকথনধারী দুজন। এরা আসলে আমাদের দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। ঝাঁকা মাথার জন আমাদের রাজনৈতিক সিষ্টেমের অধীনের মন্ত্রী, আমলা, নেতা-পাতি নেতা-এরাই চালাক... শিয়ালের মত ধুর্ত। আর ঝাঁকাবিহীন জন দেশের সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছে। এরাই বলদ... সহজ সরল। এই চালাকেরা প্রতিনিয়ত বলদদের সামনে মূলো ঝুলিয়ে চলেছে। এক একটি ইস্যুকে সামনে রেখে বলদদের দৃষ্টি বিভ্রমের আড়ালে দেশের স্বার্থবিরোধী গোপন চুক্তি করে চলেছে। যার কারণে সমুদ্র বিজয়, ট্রানজিট ইত্যকার ইস্যুগুলোতেও বলদদেরকে আনন্দে আটখানা হয়ে বিজয় মিছিল করতে দেখা যায়। প্রতি পাঁচ বছর পর পর দুই পরিবারের উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত রাজনীতির সিংহাসনকে নিরবিঘ্ন করতে নিজেদের প্রানকে এরা উৎসর্গ করে... রাজপথে উষ্ণ শোণিত ঢেলে দেয় কিংবা পাবলিক পরিবহনে বোমায় ঝলসে ‘রোষ্টেড বলদে’ পরিণত হয়। আর ঐ চালাক শিয়ালের দল বলদদের ‘রোষ্টেড’ শরীর খুবলে পাঁচ বছর ধরে খেতে থাকে। তারপরও বলদদের হুঁশ হয় না। তবে নিজেদেরকে আত্মাহুতি দেবার সময়ে যন্ত্রণার ক্লেশে মনে মনে শুধু এই বোধোদয় ঘটে, “ ইস সি রে, আমি আগেই ধারনা করছিলাম।“ তবে সেই ধারনায় কোনো লাভ হয় না। যা ক্ষতি হবার তা হয়েই গেছে। এই দেশের এই চালাক বনাম বলদ কাহিনী চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কবে হবে এর অবসান?
এবারে একটু অন্য প্রসঙ্গ।
এবারের কোরবানির ঈদে এক বলদ ক্রয়ের কাহিনী। আমার পরিচিত একজন গরুর হাট থেকীকটি বলদ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে বাসায় এসে দেখে বলদের দাতগুলোর ভিতরে দুইটা দাঁতই নেই। নেই মানে ভেঙ্গে অল্প একটু করে অবশিষ্ট ঝুলে আছে। কোরবানির জন্য প্রয়োজন নিখুঁত পশুর। তো বাড়ির মূল অভিভাবক চেঁচামেচি শুরু করলেন। বাধ্য হয়ে যিনি কিনে এনেছে, তিনি আবার গরু নিয়ে বাজারে যায় এবং ষাট হাজার টাকায় অন্য একজন বলদের নিকট বিক্রী করে একটি মহিষ কিনে বাড়ি ফিরে। তো এরাও এক ধরণের বলদ। সর্বশেষ যিনি ঐ ভাঙ্গা দাঁতের গরুটি কিনলেন তিনি হলেন ‘অরিজিন্যাল বলদ'। আর যিনি প্রথমবার গরুটি কিনে বলদ হয়েছিলেন, অবস্থার ফেরে পড়ে তিনি পরেরবার চালাক শিয়ালে পরিণত হয়েছিলেন। এভাবে বলদদের ভিতর থেকেও কেউ কেউ চালাকে পরিণত হচ্ছে এ দেশে। কিন্তু এটাও কি ঠিক?
ছোট্ট একটি ঘটনা বলে লিখাটি শেষ করছি-
একজন হুজুর ওয়াজ করছেন যে, পশ্চিম দিক ফিরে প্রস্রাব করা নিষেধ। একদিন এক মহিলা সেই হুজুরকেই পশ্চিম দিকে ফিরে মূত্র ত্যাগ করতে দেখে সেটা শেষ না হোয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। এরপর যথারীতি জিজ্ঞেস করেন-
: হুজুর আপনি সেদিনই না বললেন, পশ্চিম দিকে ফিরে প্রস্রাব করা যাবে না।
: হ্যা, ঠিকই তো বলেছি।
: তবে আজ আপনি কি করলেন?
: কি করলাম? তোমার দেখার ভিতরে ভুল ছিল। প্রস্রাব করার সময়ে আমি যে আমার হাত দিয়ে একবার ডানে... একবার বামে করছিলাম, সেটা কি তুমি দেখেছিলে? তাতে তো আর দিক ঠিক ছিল না...
আমাদের দুই প্রধান নেত্রীও আমাদের ‘বলদদের’কে নিয়ে একবার বামে এবং একবার ডানে করছেন... প্রতি পাঁচ বছর পর পর... আগামিতেও করবেন... করতেই থাকবেন...
আমরাও কি ঐ মহিলার মত দেখেই যাবো?
কিংবা গান পাউডারে ঝলসে যাবো?
অথবা বলদই থেকে যাবো?
অথবা?
???
বিষয়: বিবিধ
১০৮১ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনুভূতি রেখে যাবার জন্যও ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার গতানুগতিক মন্তব্যের বাহিরে বের হবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
তবে শিয়ালদের চামড়া থেকে মেয়েদের দামী হ্যান্ড ব্যাগ তৈরী হয়। এদের চামড়া সংগ্রহ করলে কেমন হয়?
মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহ।
ধন্যবাদ অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
তবে রাজনীতিবিদদের খারাপ দিকটুকু না নিলেই সবার উপকার হয়।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনি সঠিক বলেছেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
"মানষিক ভাবে গোলাম হলেই মানুষ ভৌগলিক ভাবে গোলাম হয়। ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আজম"
তেমনি বলা যায়...
নির্বুদ্ধিতার পাশা-পাশি স্বীয় স্বার্থে অন্ধ হলেও মানুষ 'বলদ' হয়ে যায়,বিবেচনা বোধ কে চাপা দিয়ে স্বার্থ হাসিলে বলদের মত ছোটে চলে।
বাস্তবিক সুন্দর উপমেয় লেখনীর জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা.......।
কেমন কাটালেন ঈদের দিন গুলো সবাই কে নিয়ে......? অবশ্য ই অনেক আনন্দে!!
আলহামদুলিল্লাহ! ঈদ ভালোই কেটেছে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভাইরে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে, মহিলারা বুঝি তাকিয়ে তাকিয়ে ডান বাম দেখে! কেও আমারে মাইরালা! রাস্তায় হিশু করা চিরদিনের তরে আমার জন্যো হারাম করে নিলাম!
লিখাটি অত্যন্ত চমতকার হয়েছে, রাজনৈতিক প্যাচাল কেও শোনতে পছন্দ করেনা, কিন্তু গল্পচ্ছলে আপনার গুনী উপস্থাপনা আগ্রহ মোটেও কমায়নি, বরং বাড়িয়ে দিয়েছে।
না ধন্যোবাদ দেবনা, কম হয়ে যাবে। দোয়া রইল।
হ্যা, রাস্তায় হিশু করা আসলেই ঠিক নয়। গল্পের মহিলা হুজুরের অয়াজের বিপরীত কর্ম করাতে দেখেছে। নচেৎ অন্য মহিলারা সেতা কখনো করবে না।
আপনার সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
হ্যা, এখানে বলদ বলতে শান্ত-ভদ্র এবং নির্বিরোধী বুঝাতে চেয়েছি।
আপনার সাথে সহমত।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
তবুও ষাঁড়ের চেয়ে বলদ ভালো
ধন্যবাদ অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন